ঢাকা, এপ্রিল ১৮, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ৬:৫৪ am

ব্যাধি মুক্তির সন্ধানে

| ২৫ চৈত্র ১৪২৬ | Wednesday, April 8, 2020

ব্যাধি মুক্তির সন্ধানে
করোনার কথা উঠলেই নানা প্রসঙ্গ সামনে এসে হাজির হয়। যেমন ২০০২ সালের একটি ঘটনা: পৃথিবীতে সার্স ভাইরাসের আক্রমণ ঘটে। এই ঘটনা ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করলেও তা পৃথিবীব্যাপি এভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। তবে পৃথিবীর মানুষ সঠিক অর্থে জীববিজ্ঞানকে নিতে পারলে বর্তমান এই বিপদের আভাস আগে থেকে অনেকটাই বোঝা যেত।

বিজ্ঞান বিশেষত জীববিজ্ঞান বলে, মানুষ প্রকৃতির অংশ। ফলে বিজ্ঞান জানলে সে বুঝতে পারে প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকাটা কেন প্রয়োজন। বিজ্ঞান পথ দেখাতে পারে, মানুষ পরস্পরের সঙ্গে সহনশীল সম্পর্ক রেখে কিভাবে বসবাস করবে? কেননা বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারে, কীভাবে বৃক্ষ-উদ্ভিদ, নদী-নালা গড়ে উঠেছিল? এর ওপর নির্ভর করে মানুষ ও স্তন্যপায়ী জীবদের টিকে থাকার পরিবেশ গড়ে উঠেছিল। প্রকৃতি কতটুকু চাপ সহ্য করতে পারে, তার বেশি হলে ভেঙ্গে পড়তে পারে।

আর যদি আমরা আর একটু অগ্রসর হই এবং কার্লোস লিনিয়াস, চার্লস ডারউইন, জোহান্স গ্রেগরি মেন্ডেল এর পথ ধরে হাটি তাহলে বুঝতে পারবো করোনা ভাইরাসের গতি প্রকৃতি। কার্লোস লিনিয়াসের ট্যাক্সোনোমি বা নামকরণবিদ্যার পথ ধরেই আমরা বুঝতে পারি বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভাইরাসটির বিজ্ঞানভিত্তিক কি নামটি হওয়া উচিৎ এবং অন্যান্য ভাইরাসের সঙ্গে তার পার্থক্য কী? ডারউইনের ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বানুসারে আমরা বুঝতে পারি পৃথিবীতে এতো বিপুল বৈচিত্র্যের কারণ, প্রাণজগতের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক, কিভাবে পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করে চলতে হবে? তার ব্যত্যয় হলে কি ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে? জোহান গ্রেগরি মেন্ডেল এর বংশগতির পথ ধরে আমরা বুঝতে পারি সেই ভেঙ্গে পড়া পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, পরিবর্তন বা মিউটশনের কতসব অভিনব ধারা থাকতে পারে।

আর মাথায় রাখতে হবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়লাভ করার কিছু নেই, তাকে সমন্বয় করে চলতে হয়। উল্লেখ্য ইংল্যান্ডে প্লেগ রোগ দেখা দিলে ১৬৬৫ সালের মধ্যভাগে মহামারি আকারে বিস্তারলাভ করে। ফলে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় নিউটন নিজ গ্রাম উইলসথর্পে ফিরে আসেন। ১৮ মাসের অবসরে তাঁর নিজের গ্রামের বাড়িতে তৈরি হয় তাঁর সমস্ত আবিষ্কারের ভিত্তি। মহাকর্ষ ও গতির সূত্র আবিষ্কার ছাড়াও ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস ও ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাসে জন্ম হয়েছিল যা গাণিতিক নিয়মে প্রকৃতির বিষয় অনুসন্ধানের পথ খুলে দিয়েছিল।

একই রকম কাজ সবকালে, সব পরিস্থিতে হতে হবে এমন কোনো কথা নেই; তবে বিশ্বের প্রায় ১১৫টি দেশে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে জাতীয় কিংবা স্থানীয় পর্যায়ে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, ফলে প্রায় ১২০ কোটি শিক্ষার্থী একরকম বেকার হয়ে পড়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেকেই অনলাইনের সুবাদে বর্তমান থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বোর্ডের বইয়ের গাদা গাদা পড়া শিক্ষার্থীদের গেলাতে চাইছে। আর শিক্ষার্থীরা চোখের সামনে ঘটে চলা মৃত্যু, ক্ষুধা আতঙ্ককে নির্লিপ্তভাবে পাশ কাটিয়ে খাচ্ছে আর উগরাচ্ছে।

অথচ ভাবুন দেখি ছোট্ট একটা ভাইরাস, চোখে দেখা যায় না। কিভাবে পৃথিবীটাকে সম্পূর্ণ স্তব্ধ করে দিল। পরে জানা গেল ২০০২ সালে প্রাদুর্ভাব হওয়া সার্স ভাইরাসের সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক আছে বা এটি তার বিবর্তিত রূপ। তাহলে পৃথিবীর মানুষ বুঝতে পারলো না কেন? আমরাতো জানতাম সেইসব জীববিজ্ঞানীদের এবং তাদের দেখানো পথগুলোকে। ক্ষমতায় থাকা নেতৃত্ব আরেকটি দেশের পরিস্থিতি থেকে দেখে শোধরালো না কেন? কারণ পুঁজি, মুনাফা, ক্ষমতার লোভ আর শ্রেষ্ঠত্বের দম্ভ; অশুভ এবং অপরিপক্ক মস্তিস্কধারী ব্যাক্তিদের ক্ষমতার শীর্ষ বা কেন্দ্রে আরোহন অথবা শীর্ষ বা কেন্দ্রবিন্দু বলে কিছু থাকার মতো অনেক ধরনের ব্যাধি।

আহ, এভাবে যদি চিন্তা করা সম্ভব হয় যে পৃথিবীর এই সব শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বেরিয়ে আসবে, বেরিয়ে আসবে সেই সব মানুষেরা, যারা দেখাবে এক ব্যাধিমুক্ত পৃথিবীর পথ।

লেখক: আসিফ
বিজ্ঞান বক্তা ও লেখক; সম্পাদক, মহাবৃত্ত