ঢাকা, মার্চ ২৯, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, স্থানীয় সময়: ৬:২১ am

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

১৫ বছর পেরিয়ে

১৫ বছর পেরিয়ে

| ২৭ ফাল্গুন ১৪২১ | Wednesday, March 11, 2015

60-open-discussion-2.jpgআজ আমরা মানুষেরা পৃথিবী নামক শ্যামলগ্রহে বসে চাঁদ এবং মঙ্গলকে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলার যে স্বপ্ন, যে পরিকল্পনা করছি সেই মানুষেরা তাদের জ্ঞানের সংগ্রাম শুরু করেছিল লক্ষ বছর আগে। প্রয়োজন ও চাহিদার কারণে মানুষ অনেকদূর এগিয়েছিল একথা সত্যি। কিন্তু দেবতাদের প্রভাব এড়াতে পারেনি, পারেনি কুসংস্কার মুক্ত হতে। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ-এখনও আমাদের মধ্যে অনেকে- এই ভাবনা দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল যে, বিশ্ব হল এক নাচের পুতুল, একে নাচানোর জন্য দেব-দেবীরা দড়ি ধরে অদৃশ্য এবং অবর্ণনীয়ভাবে টানাটানি করছে। কিন্তু তারপরও অসম্ভব কৌতুহল, বেপরোয়া দুঃসাহসিক আবেগ নিয়ে জেগে উঠেছিল আয়োনীয়রা। আয়োনিয়া ছিল এক দ্বীপময় জগত। অনেকগুলো ভিন্ন ধরনের দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছিল আয়োনিয়া যেখানে বিরাজ করতো ভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা। এমন কোন একক শক্তি কেন্দ্রীভূত ছিল না যা সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিগত স্বাভাবিকতায় হস্তক্ষেপ বা বল প্রয়োগ করতে পারে, বাঁধা দিতে পারে। ফলে মুক্তভাবে জ্ঞানচর্চা এবং অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়েছিল। কুসংস্কারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের প্রয়োজন ছিল না। আয়োনিয়া নৌ-চালনা ও বাণিজ্যের জন্য উৎকৃষ্ট সন্তান হওয়াতে বিশাল সমুদ্র বন্দরে রূপান্তরিত হয়েছিল। অর্থাৎ আয়োনিয়া পরিণত হয়েছিল আন্তঃসভ্যতার মিলন মেলায়—মিশর, ব্যাবিলন, ফিনিশিয়া, মেসোপটেমিয়া, গ্রীক দ্বীপগুলো, ইউরোপীয় সভ্যতা, এশিয়া। এ সকল বিভিন্ন জাতের ঐতিহ্যবাহী লোক একত্র হওয়ার ফলে একটি বিষয়ে একাধিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করা সহজ হয়েছিল। আর এভাবেই একাধিক সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়ার ফলে বেরিয়ে এসেছিল মহাকালের প্রতিভারা—
তারা বেড়িয়ে পড়েছিল পৃথিবীর পথে সমস- জাগতিক নিয়মকে বেঁধে ফেলবে বলে, তারাই প্রথম দেবতাদের প্রভাব এড়িয়ে যুক্তি ও পরীক্ষণের মাধ্যমে পদার্থ এবং বিশ্বকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিল–এভাবেই জন্ম হয়েছিল বিজ্ঞানের আজ থেকে ২৬শত বছর আগে। এই প্রতিভারা ছিলেন কৃষক, নাবিক এবং তাতীদের সন্মান। তাঁরা যা দেখতো তাই ভালভাবে বোঝার এবং ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতো। পুরোহিত, ইহুদী ধর্মযাজকদের মত নয়, বিলাসিতার মধ্যে বড় হয়ে উঠলেও তাঁরা নোংরা কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেনি। তারা কুসংস্কারকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। প্রয়োজনে অর্থ উপার্জন করেছে এবং তা গবেষণা ও জীবনের মহত্তম কাজে ব্যবহার করেছিল। আয়োনিয়রা মনে করতো সবকিছু পরমাণু দিয়ে তৈরি, মানব প্রজাতি বা অন্যকোন প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে খুবই সরল অবস্থা হতে। রোগ কোন দেবতা বা শয়তানের কারসাজি নয়। পৃথিবী শুধুই একটি গ্রহ, চাঁদের পাহাড় আছে আর নক্ষত্রেরা অনেকদূরে। আলোর গতি অসীম নয়, তারও একটা সীমানা আছে। তারা গণিত ও জ্যামিতির অবরোহী পদ্ধতির ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিল। আয়োনীয়রা যুক্তির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছিল এই বিশ্ব প্রাকৃতিক কিছু নিয়ম শৃংখলা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বিশ্বের এই শৃংখলাপূর্ণ, বিস্ময়কর ও মুগ্ধকর চরিত্রকে বলা হয় মহাবিশ্ব।
এই আয়োনীয়ারা ছিলেন থেলিস, পিথাগোরাস, হিপোক্রেটিস, এমপিডকলেস, অ্যানাক্সোগোরাস, ডিমোক্রিটাস ও থিয়োডোরাসের (প্রকৌশলী) মত বিজ্ঞানীরা। এরাই ছিলেন সত্যিকারভাবে সভ্যতার উন্নতি এবং মানবিকতার প্রথম পথিক। তারপরও বহু চড়াই-উৎড়াই পার হতে হয়েছে। সময়ের এ ধারায় যুক্ত হয়েছে আরো নাম—আলেক্সান্দ্রিয়ার ইরাটোসে’নিস, ইউক্লিড, আর্কেমিডিস, অ্যারিস্টোকার্স, হাইপেশিয়া। তারওপর কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, নিউটন, আইস্টাইনের মত অনন্য প্রতিভারা, যারা নিজস্ব স্বপ্ন ও সংগ্রামের মধ্যদিয়ে সভ্যতাকে এক একটি নবযুগের প্রানে- পৌঁছে দিয়েছেন। আমরা স্মরণ করি বাংলাদেশের বিক্রমপুরের অতীশ দীপংকরের (৯৮২খ্রিষ্টাব্দে) কথা। জ্ঞানের তৃষ্ণা মিটানোর জন্য তিনি বিহার থেকে বিহারে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিহার প্রতিষ্ঠা করেছেন। যিনি বৃদ্ধ বয়সেও তিব্বতের জনগণের প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে আলো আঁধারী ভরা দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তিব্বতে ছুটে গিয়েছেন জ্ঞানের প্রদীপ হাতে নিয়ে। তিব্বতে বহু মঠ-মন্দির এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মান সহ দ্বি-শতাধিক গ্রন’ রচনা, অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন। এদেশের ইতিহাসে জ্ঞানের জন্য এত বড় আত্মত্যাগ আর হয়নি। এ সকল প্রতিভাদের স্বপ্ন এবং আয়োনীয় বিজ্ঞানীদের ঐতিহ্যকে লালন করে ডিসকাশন প্রজেক্টের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯২ সালের ১৯শে মে।