ঢাকা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১:০৪ pm

পৃথিবী ও আকাশ

| ৯ চৈত্র ১৪১৯ | Saturday, March 23, 2013

পৃথিবী ও আকাশবাংলা অনুবাদ সংস্করণ সম্পাদনা ২০১৩
মহাজাগতিক ঐক্য

জোহানস কেপলার শুধু একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীই ছিলেন না, প্রথম দিককার বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর লেখকও ছিলেন। চাঁদে ভ্রমনের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মাধ্যমে তার আবিস্কৃত তত্ত্বের বর্ণনা দিয়েছিলেন। কেপলার বলেছিলেন, ‘আমরা জিজ্ঞেস করি না কী উপকারের উদ্দেশ্যে পাখিরা গান গায়, কারণ গান হলো তাদের আনন্দ যেহেতু তাদের সৃষ্টি হয়েছিল গান গাওয়ার জন্য। অনুরূপভাবে, আমাদের জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না কেন মানবমন অস্থির বা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে মহাকাশের রহস্য উন্মোচন বা অনুধাবনে।
চারপাশের ঘটনাবলি যদি খুব বেশি অপরিবর্তিত থাকত, তাহলে তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা যেত না। আবার বেশি বিশৃঙ্খলাপূর্ণ থাকলে সেখানেও কিছু করা যেত না, সৃষ্টি হতো না বিজ্ঞানের জন্য অনুপ্রেরণা বা আবেগ। কিন্তু আমরা এই দুইয়ের মাঝামাঝি এমন একটি জগতে বসবাস করি, যেখানে বস্তুর পরিবর্তন ঘটে, বিন্যাস ও নিয়মানুসারে। শৃঙ্খলাকে প্রকৃতির নিয়ম বলে ডাকি। কোনো লাঠিকে উপর দিকে বাতাসের মধ্যে নিক্ষেপ করলে সেটা সবসময় নিচের দিকে পড়বে। যদি সূর্য পশ্চিম দিকে অস্ত যায়, সেটা সবসময় আবার পরবর্তী সকালে পূর্ব দিকে উদিত হবে। সুতরাং এর বৈশিষ্ট্য বা নিয়মকানুন বের করা সম্ভব হবে। আমরা বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে আমাদের জীবন-যাপনকে উন্নত করতে পারি। মানব অস্তিত্বের সবচেয়ে বিশাল অংশ অতিবাহিত হয়েছিল বর্তমানের কোনো প্রাযুক্তিক সুবিধা ছাড়াই। ক্যাম্পফায়ারের নিভন্ত আগুন আর চন্দ্রহীন রাতের মধ্য দিয়ে আমরা তখন নক্ষত্রকে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম।
প্রাচীন মানুষ মহাকাশ বা জ্যোতির্বিজ্ঞান শেখার জন্য এতটা উদ্বুদ্ধ হয়েছিল কেন? জ্যোতির্বিজ্ঞান উৎসাহিত করেছিল পর্যবেক্ষণ ও গণিতশাস্ত্রকে। মানুষ সূর্য, চাঁদ এবং নক্ষত্রের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করেছিল তাদের জীবনের প্রয়োজনে, বেঁচে থাকার তাগিদে। টলেমি থেকে শুরু করে টাইকোব্রাহে, কোপার্নিকাস, কেপলার হয়ে নিউটন পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের একটি পথরেখা আছে। অন্ধকারযুগে টলেমির প্রতিরূপগুলো চার্চের সহযোগিতায় এক সহস্রাব্দ ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে বাধা দিয়েছিল। অবশেষে ১৫৪৩ সালে, কোপার্নিকাস নামের এক পোলিশ ক্যাথলিক গ্রহগুলোর আপাত গতিকে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকল্পে ব্যাখ্যা করেন। এর সবচেয়ে মারাত্মক প্রবন্ধটি ছিল ওই প্রস্তাবনাটি যে, পৃথিবী নয় সূর্যই হল বিশ্বের কেন্দ্রে।
‘পৃথিবী ও আকাশ’ বইটা শুরু হয়েছে, প্রথমে মানুষ কিভাবে তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলো পর্যবেক্ষণের মধ্যে নিয়েছে, তারপর তারপর জলপথে ঘুরে বেড়িয়েছে, হারিয়ে যাওয়া, বা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়েও পৃথিবীকে পূর্ণভাবে ঘুরে এসেছে - এই বর্ণনা দিয়ে। তারপর মহাশূন্যে গিয়ে চাদ থেকে পৃথিবীকে দেখেছে আর বলেছে ওই হলো পৃথিবী ‘নীলাভ-সাদা’।
এই বইটি রচনায় আ.ভলকভের হৃদয়ের উচ্ছাস প্রকাশ পেয়েছে। বিজ্ঞানের সংগ্রামের বর্ণনাগুলোতে তার আবেগ প্রবলভাবে সঞ্চালিত করেছে পাঠকের মধ্যে। বইটির মধ্যে কাব্যিক ঢং এর যে প্রকাশ ঘটেছে তা তার এক বর্ণনা থেকে বোঝা যায় - আকাশ দেখার সবচেয়ে ভালো সময় হলো গ্রীষ্মের উষ্ণ রাত, নদীতীরে ছিপ দিয়ে বস বা খোলা স্তেপে নিঃসঙ্গ টিলায় শুয়ে পড়। সংক্ষিপ্ত রাত কেটে যায় তাড়াতাড়ি, পুবদিকে উষার রক্তাভা। একের পর এক তারাগুলো মিলিয়ে যায়। সবচেয়ে উজ্জ্বলগুলো টিকে থাকে সবচেয়ে বেশি। তিনি আরো বলেছেন, মহাশূন্য বিজ্ঞানের’ সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে লৌকিক প্রয়োজনের।
গ্রহনক্ষত্র অভিযানে, বা এগুলো সম্পর্কে কোথাও কোথাও একটু আগের তথ্য আছে সেগুলো ভুল না। সীমাবদ্ধতা। আর মঙ্গলে প্রাণের ব্যাপারে যে উচ্ছাস তাহলো সেই সময়কার বাস্তবতা। এই বইয়ের লক্ষ্য কিশোর মানসে মহাজাগতিক ইচ্ছাকে উসকে দেওয়া। লেখক আ. ভালকভ তাই করেছেন।
তাই এই বইকে পরিবর্তন করার তেমন কোনো প্রয়োজন নেই। তবে বিষয়বস্তুকে ঠিক রেখে ভাষা, চিত্র ও বক্তব্যকে সাবলীল করা হয়েছে বাংলা সংস্করণ সম্পাদনা-২০১৩ এ। প্রত্যেক পরিচ্ছেদেই প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞানী ও লেখকদের ছবি বসানো হয়েছে আরও ব্যাপক পাঠককে আকর্ষণ করার জন্য। সেখানে তাদের বিবৃতি-পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। এরকম বিষয়ভিত্তিক এবং সরল উপস্থাপনের বিজ্ঞান বইগুলোকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ডিসকাশন প্রজেক্ট একটি উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। যে বইগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে সেগুলো প্রয়োজনীয় সম্পাদনা সহ প্রকাশের ব্যবস্থা করবে। সেই সাথে নতুন বিজ্ঞানের বই লিখবে বিজ্ঞানকর্মীরা। এ ব্যাপারে প্রকাশনা সংস্থা তাম্রলিপিও এগিয়ে এসেছে স্বতস্ফূর্ত অবস্থান নিয়ে। ডিসকাশন প্রজেক্ট দীর্ঘ ২০ বছর বক্তৃতা দিয়ে বেড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এবার বিজ্ঞান বক্তৃতার পাশাপাশি প্রকাশিত বইগুলোকে নিয়ে দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে ছুটে যাবে বিজ্ঞানের বার্তা পৌছে দিতে। আমাদের গতি হয়তো ধীর, কিন্তু স্থির। আদিম মানুষের যাত্রাও মন্থর ছিল, সেটাকে ভ্রমণ না বলে দেশান্তর যাত্রা বলাই উচিত। কিন্তু তারা অনেক বছর ব্যাপী যাত্রার মধ্যেদিয়ে পৃথিবী ব্যাপি ছড়িয়ে পড়েছিল। মহাকাশযুগে প্রবেশ করেছিল। আমরাও স্থিরতা নিয়ে মহাজাগতিক সংস্কৃতির পথে ছুটে চলেছি।
বিজ্ঞান অন্ধকারের প্রদীপ। আসুন এ প্রদীপের আলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দেই। জ্ঞানই আমাদের গন্তব্য।

তাম্রলিপি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলা অনুবাদ সংস্করণ সম্পাদনা
মূল বাংলা অনুবাদ: সমর সেন
বাংলা অনুবাদ সংস্করণ সম্পাদনা: আসিফ
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৩
মূল্য: ২০০ টাকা
পৃষ্ঠা: ১৭৬
প্রচ্ছদ: যোয়েল কর্মকার
ISBN: 984-70096-0182-8